১.
নিণন নামটা শুনলেই কেমন যেন সায়েন্সফিকশন সায়েন্সফিকশন গন্ধ পাওয়া যায়। নিণন কোন সায়েন্সফিকশন চরিত্র নয় তবে সায়েন্স তার প্যাশন। নিণনের বাবার নাম আজম। নিণন নামটা তারই দেয়া। তার নাম গোলাম আজমের সাথে মিলে বলে সবাই তাকে রাজাকার বলে ক্ষেপাত। এটা তার অন্তপিড়নের বিষয় ছিল। গোলাম আজম এবং রাজাকার এই দুইকেই ভিষণ ঘৃণা করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কিশোর। অনেক কিশোর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তিনি নিতে পারেননি। এই হতাশা তাকে এখনও আক্রান্ত করে। ছেলের নাম দেয়ার সময় তাই খুব সাবধান ছিলেন আজম সাহেব। তাই বলে নিণন! এই রকম একটা নাম দেয়ার জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাকে। এই শব্দের কোনই অর্থ নেই। শুধুই শ্রুতিমধুর। প্রথম প্রথম কেউ শব্দের মানে নেই বললে ভৎসনার পরিমান বেড়ে যেত। তাই নিণন শব্দের অর্থ কেউ জানতে চাইলে বলতেন “সংখ্যা”। যেই শুনতো বলত, বাহ! সুন্দর নাম। যাচাই করতে তো কেউ যাচ্ছে না, সমস্যা কি? নিণনের সাথে যারা পরিচিত তারা সবাই জানে নিণন মানে সংখ্যা।
ছোট বেলা থেকেই রোবটিক্সে নিণনের বিস্তর আগ্রহ। কার্টুন ছবির রোবট চরিত্র গুলো থেকে তার আগ্রহের জন্ম। তার সকল খেলনাই ছিল রোবট সংক্রান্ত। ছোট বেলার আগ্রহ সাধারণত বড় বেলার অনাগ্রহের কারণ হয় কিন্তু নিণনের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তার বাবা আজম ছেলের এই আগ্রহে দ্বিধান্বিত ছিলেন। বুয়েটে চান্স পাওয়ার পর একটু আস্বস্ত হয়েছিলেন আর যখন জাপান থেকে বিশেষ ভাবে স্কলারশিপ দিয়ে তাকে বলতে গেলে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল তখন গর্বে তার বুক চার হাত ফুলে গেল। মফস্বলের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত্ব সংসারে যেন এক সোনার টুকরো ছেলে। তিনি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করেন। ছেলের বদৌলতে এখন অনেকেই তাকে চিনে, জানে। অনেক বিত্ত্ববান কন্যার পিতারাও তাকে তোষামোদ করে কথা বলেন। এই রকম একটা ছেলেকে মেয়ের স্বামী হিসাবে পেতে কে না চায়। তাছাড়া নিণন দেখতে শুনতেও চৌকষ।
আজম সাহেব তার ছোট পদের সরকারী চাকুরীটা মেয়াদ ফুরোনোর আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। এখন তার হাতে বলতে গেলে কোন কাজ নেই। বাজারে জান, কেনা কাটা করেন। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে যান। কিন্তু আড্ডা জমে না। সময় কোথায় সবার। তার মত তার বন্ধুরাতো বেকার নন। হাপিয়ে উঠছিলেন কাজহীন থাকতে থাকতে। তাছাড়া শরীর এখনো ভেঙ্গে যায়নি যে সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকবে। তাই স্কুলের পাশে একটা বই এর দোকান খোলার চিন্তা চেষ্টা করেছেন। সেই জন্য একটু ঘুরাঘুরি করতে হচ্ছে। এই নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে। দোকান ভাড়া নেয়ার জন্যই আজকে সালাম সাহেবের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন। সালাম সাহেব তার পূর্বপরিচিত। যে মেহমানদারিটা সালাম সাহেব করলেন তা দেখার মত। দোকান যেন তিনি এমনিতেই তাকে দিয়ে দেন। কথা পাকাপাকি হতে বেশী সময় লাগেনি। সালাম সাহেব বার বার বলছিলেন, আপনি কেন মিছি মিছি দোকান খুলতে যাচ্ছেন? আপনার দোকান করার কি কোন দরকার আছে? আজম সাহেব বললেন, তা ঠিক দরকার নেই, কিন্তু কাজ ছাড়া বসে থাকতে কি ভাল লাগে বলেন? কর্মচারী থাকবে। আমি একটু দেখভাল করব। কোন রকমে খরচ আর পুজি উঠে আসলেই চলবে। সময় কাটানো আর কি।
আজম সাহেবের মনটা আজকে খুবই উৎফুল্ল হয়ে আছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসেই বই এর দোকান তিনি খুলতে পারবেন। বই এর দোকান চালানোর ক্ষেত্রে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। সরকারী চাকরী শুরু করার আগে বছর খানেক তিনি একটা বই এর দোকান দেখাশুনা করেছেন। ব্যবসায় সফল হওয়ার ব্যপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। মনে মনে বই এর দোকানের নাম পর্যন্ত তিনি ঠিক করে ফেলেছেন। তার বই এর দোকানের নাম হবে নিণন বুক হাউজ অথবা নিণন বই ঘর।
রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাসায় ঢুকতেই আজম সাহেব বুঝতে পারলেন কিছু একটা হয়েছে। বাসাটা যেন কবর খানার মত নিশ্চুপ। তিনি একটু ঘাবড়ে গেলেন। ডাইনিং টেবিলে নিণনের মা মিতা বেগম খাবার সাজাচ্ছেন। আরতি তাকে সাহায্য করছে। নিশ্চুপ থাকা মিতার স্বাভাব বিরুদ্ধ। সারাক্ষণ তিনি কথা বলতে থাকেন। আরতি ভাল শ্রোতা। মনযোগ সহকারে তার সব কথা শোনে। প্রয়োজন মাফিক জবাব দেয়। আজম সাহেব ডাইনিং টেবিলে একটা চেয়ার টেনে বসলেন। ভাল করে তাকালেন মিতার দিকে বোঝার চেষ্টা করলেন কি হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছু ধরতে পারলেন না। আরতিকে জিজ্ঞাস করলেন, আরতি কি হয়েছে রে?
: ভাইয়া আসছে।
: নিণন এসেছে! বিস্মিত হলেন আজম সাহেব। কই নিণন তো কিছু জানালোনা আগে। নিণন এসেছে এ তো খুশির খবর তোমরা এমন মুখ গোমড়া করে আছ কেন? কোথায় সে?
মিতা বললেন, ও আছে ওর ঘরে। তোমার সোনার ছেলে চাকরি বাকরি ছেড়ে চলে এসেছে। সে নাকি আর ফিরে যাবে না। মিতার কথায় আজম সাহেব একটু ঘাবড়ে গেলেন। যে কিনা ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রায় তার কাছে আব্দার করত সে কিনা খুশি না হয়ে মন খারাপ করে আছে। নিণনের কি খারাপ কিছু হয়েছে? কিন্তু নিণনই বা এই সিদ্ধান্ত কেন নেবে? এই দেশে রোবটিক্স এর জ্ঞান কি কাজে লাগবে? কি করে খাবে ও এই দেশে?
২.
কাস্টমস অফিসার রাহাত মানুষের চোখ দেখে বলে দিতে পারে সে অপরাধী কিনা। চেলেঞ্জ করে ভুল করেছে এমন দৃষ্টান্ত খুব কমই হয়েছে রাহাতের ক্ষেত্রে। উসকো খুসকো চুলের কম বয়েসী যুবকটার দিকে তার নজর পড়েছে অনেক্ষণ আগে। ছেলেটা দেখতে চৌকষ। কিন্তু উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। ডিপার্চারের জন্য কিউতে দাড়িয়ে আছে। ঘনঘন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। রাহাত ডিপার্চার ডেস্কে ইমিগ্রেশন অফিসার এর কাছে এসে দাড়াল। উসকো খুসকো চুলের যুবক তার টিকেট পাসপোর্ট আর ডিপার্চার স্লিপটা এগিয়ে দিতেই ইমিগ্রেশন অফিসারের হাত থেকে রাহাত তা নিয়ে নিল। অদ্ভুত নামটা দেখে নিয়ে যুবকের দিকে তাকলো। তারপর খুব স্থির ভাবে বলল, মিঃ নিণন রহমান আপনি একটু আমাদের সাথে আসুন। শকুনের দৃষ্টিতে রাহাত নিণনের চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। পরিবর্তন লক্ষ করার জন্য। কিন্তু কোন পরিবর্তন হলোনা। রাহাত একটু দ্বিধান্বিত হলো। তাহলে কি সে ভুল করছে? তারপর কি মনে করে বলল, ওকে নো নিড টু কাম, ইমিগ্রেশন অফিসারকে কাগজ গুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলল, লেট হিম গো টু হোম। নিণনের কাগজ পত্র দিয়ে দিলেও রাহাতের সন্দেহ যেন থেকেই গেল। লাগেজ চেকিং পয়েন্টে এসে দাড়াল। বেশ কিছুক্ষণ পর নিণন কে আসতে দেখল। তরতাজা এক তরুণ কিন্তু হাটছে একটু ঝুকে। চোখে পাওয়ারফুল চশমা। নিণনের হাতে একটা ল্যপটপের ব্যাগ আর একটা সাধারণ কাপড়ের ব্যাগ দেখে আবারও হতাশ হল। সাধারণত ভুল সন্দেহ করে না রাহাত। তারপরও নিণনের লাগেজ খুটিয়ে খুটিয়ে পরিক্ষা করা হলো। নাহ! সন্দেহ করার মত কিছুই নেই। নিজের উপর বিরক্ত হল। তারপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিণনকে চলে যেতে দেখল রাহাত। ছেলেটা একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং বোঝা যাচ্ছে খুবই সফল, কিন্তু তার চোখে মুখে এই রকম অভিব্যাক্তি কেন? যেন কিছু লুকিয়ে রাখতে চাচ্ছে!
রাহাতের মুখটা কেমন তেতো হয়ে আছে। এক কাপ কফির জন্য মনটা চনমন করে উঠেছে। তাই কফি মেশিন টার দিকে এগিয়ে গেল। ফুল হাউজ এক পাত্র কফি নিয়ে আয়েসে একটা চুমুক দিল। দ্বিতীয় চুমুক দেয়ার সময় করিডোরে ভয়ার্ত মানুষের আর্তচিৎকার আর ছুটাছুটি দেখতে পেল। কোর্টের নিচে বুকের কাছে রাখা রিভলভারটা হাতে নিয়ে এগুতেই যা দেখল তা বিশ্বাস করার মত নয়। একঝাক রূপালী মাছি করিডোরের ছাদ ঘেসে উড়ে যাচ্ছে। নিচে মানুষ গুলো ভয়ে দৌড়াচ্ছে। রাহাত চিৎকার করে সবাইকে বসে পড়তে বলল এবং নিজেও বসে পড়ল। ওর হাতের রিভলবারটা দেখেই হোক বা অন্যকারনেই হোক ভয়ার্ত মানুষ গুলো করিডোরের ফ্লোরে বসে পড়ল। মাছি গুলো মাথার উপড় দিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করল রাহাত। এক ঝাঁক মাছির মধ্য থেকে একটা মাছি ফ্লোরে পড়ে গেল। বাকি মাছি গুলো দ্রুত এয়ারপোর্ট ছেড়ে বাইরে চলে গেল এবং নিমিষেই আকাশে মিলিয়ে গেল। রাহাত হাটু গেড়ে মরা মাছিটাকে দেখে ভিষণ অবাক হলো। এটাকে মরা মাছি না বলে বিকল মাছি বলাই ঠিক হবে। কারণ এটা মাছি নয় এটা একটা যন্ত্র – নিঁখুত ন্যনো রবোটিক্স।
৩.
তাকাসিনো কোম্পোনীর চেয়ারম্যান তাকাসি সান গোপন মিটিং ডেকেছেন। কোম্পানীর খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ মিটিং এ উপস্থিত। শুধু মাত্র এরাই কোম্পানীর সকল গোপনীয়তা সম্পর্কে অবগত থাকেন। তাকাসি সান খুবই ঠান্ডামাথার মানুষ। এ রকম একটা বির্পযয় হয়ে যাওয়ার পরও তিনি মাথা ঠান্ডা রেখেছেন। এখন পর্যন্ত এই বির্পযয়ের জন্য কাউকে কোন সাজা দেননি। তিনি এর একটা সমাধান খুজছেন। দ্রুত সমাধান এর জন্য অন্য সকল পদক্ষেপ নেয়া থেকে তিনি বিরত আছেন। তবে সবাই জানে এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হবে। দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। তাকাসি সান সুরার পাত্রে চুমুক দিয়ে হালকা রসিকতা করলেন। আলোচনার পরিবেশ হালকা করার জন্য সচরাচর তিনি যা করেন। কিন্তু আজকে ব্যতিক্রম ভাবে পরিবেশ হালকা হওয়ার চেয়ে যেন আর ভারি হলো। তিনি তা গুরুত্ব না দিয়ে বললেন, ছেলেটা কি পাগল? তোমাদের কি মনে হয়?
একজন ডিরেক্টর বললেন, স্যার বুদ্ধিমানরা একটু পাগলাটে হয় বৈকি।
: নিণন ন্যনো গুলো নিয়ে কি করতে পারে? কেন ও এগুলো নিয়ে গেল?
: আমাদের কোন ধারনা নেই স্যার। তবে ও কিছু করার আগেই আমাদের তাকে থামাতে হবে। আমাদের এই গোপন প্রজেক্টের কথা জানাজনি হয়ে গেলে আমরা সবাই প্রচন্ড বিপদের মুখে পড়ব। সেই সাথে আমাদের দেশ।
: তুমি ঠিক বলেছ। কিন্তু তাকে থামানোর জন্য আমরা রাষ্ট্রীয় ভাবে কিছু করতে পারবো না।
: জি স্যার।
: তার মানে তাকে সরিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই।
তার কথায় সকল ডিরেক্টররা মাথা নিচু করে নাড়াল। তাকাসি সান কে অস্থির দেখা গেল। মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, না মানতে পারছি না। এমন একটা বুদ্ধিমান ছেলের এরকম অপচয়। তিনি স্বাভাবিক হয়ে আবার বললেন, যাক আমাদের হাতে যেহেতু আর কোন রাস্তা নেই তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নিতে হয় নাও।
তার ঠিক দুইদিন পর জাপানী পর্যটক মিতসু কাওয়া কে শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে টেক্সি নিয়ে গুলশানের একটা গেষ্ট হাউজের দিকে যেতে দেখা গেল।
৪.
আরতি আজম সাহেবদের বাসায় যখন আসে তখন তার বয়স দশ বছর। সব শারীরিক বিবর্তনের পর এখন তেইশ বছরের আকর্ষনীয় কাঠামো। গায়ের রং একটু চাপা হলেও সুন্দরী। গায়ের চাপা রং টাই যেন তার সৌন্দর্যের আসল অংশ। আজম সাহেবের বাসায় সে মেয়ের আদরে মানুষ। এ বাড়ীর প্রতিটা মানুষ এত ভাল কেন, তা বুঝতে পারেনা আরতি। কেউ বলে দেয়নি কিন্তু ঠিক কবে থেকে আজম সাহেব আর মিতা বেগমকে ও মা, বাবা ডাকে এখন আর মনে করতে পারেনা। এই ডাক আজম সাহেব বা মিতা বেগমও মেনে নিয়েছেন, ভাবেন এতো ওদের মেয়েই। আরতি জানে না মানুষ এত ভাল হয় কিভাবে? আজম সাহেব আরতিকে পড়ালেখা পর্যন্ত করিয়েছেন। কিন্তু পড়ালেখায় তার মন নেই। কোন রকমে এইচ.এস.সি পাশ করার পর সে নিজেই আর পড়াশোনা করতে চায়নি। কিন্তু সবাই তো আজম সাহেব না। আশ্রিত আর কাজের লোক হিসাবেই যেন সহজলভ্য, আশে পাশের মানুষের এমন ললুপ দৃষ্টি এড়িয়ে চলতে চলতে আরতি নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত। এক সময় তার মরে যেতে ইচ্ছে করত। মিতা বেগম দ্রুতই আরতির বিয়ে শাদি দিয়ে দিতে চান। মুসলমান বাড়ীতে মানুষ বলে নিজ সমাজে তার গ্রহনযোগ্যতা নেই। মেনে নিলে দাবি দাওয়ার পরিমান হয় বেশী। আজম সাহেবের ঘোর আপত্তি থাকলেও দাবি দাওয়া কোন সমস্যা নয়। একজন ভাল পাত্রের খোঁজে আছেন তারা। আরতি ধর্ম কর্ম না করলেও ধর্মান্তরিত হতে নারাজ। আজম সাহেব বা মিতা বেগম এই ব্যপারে কখন কথাও তোলেন নি। এটা তারা বুঝে নিয়েছেন।
নিণন ফিরে আসার পর বাসার পরিবেশ একটু অন্যরকম হয়ে আছে। তার আসার ব্যপারে সবাই হয়ত আপ্লুতই হত যদি ফের ফিরে যাওয়া নিয়ে সে এমন নাটক না করত। আরতির মনে হচ্ছে নিণন কিছু একটা লুকাচ্ছে। তার কথা বার্তার মধ্যে কোন সংগতি নেই। স্পষ্ট করেও কিছু বলছে না। তার চোখে মুখে এক ধরনের ভয় ভর করেছে বলে মনে হয় আরতির। নিণন কি কোন অপরাধ করেছে? কিন্তু তা হতেই পারেনা। নিণন কখনোই তা করতে পারে না। তবে তার মাঝে এই রকম পরিবর্তন কেন? ঠিক বুঝতে পারছে না। আরতির সাথে তার সম্পর্কটা একটু আড়ালের। কথা বার্তা হয় খুবই কম। তাছাড়া নিণন কথা বলতে পছন্দ করে না।
ছাদে কাপড় নাড়তে এসে দেখল নিণন পায়চারি করছে। তাকে অস্থির দেখাচ্ছে। নিণনের এই অস্থিরতা তাকে কষ্ট দেয়। কাপড় নাড়তে নাড়তে নিণনকে লক্ষ্য করছে আরতি। ও যে ছাদে আছে তাতে নিণন ভ্রুক্ষেপ করল না। কাপড় নাড়া শেষ হলে আরতি নিণনের সামনে এসে দাড়াল। আরতিকে যেন এই মাত্র লক্ষ্য করল নিণন, বলল “ও আরতি কেমন আছিস?”
: আমি ভাল আছি ভাইয়া। তুমি ভাল নেই বুঝতে পারছি। কি হয়েছে তোমার, আমাকে কি তুমি বলবে? কোন সমস্যা? আমাকে বল, আমি কাউকে বলবনা।
: না আরতি, কোন সমস্যা না। এমনি। কেন?
: তুমি কথা কম বল, এইটা একটা বিশাল সমস্যা। কিন্তু সব কিছু চেপে রাখতে হয়না। কারো না কারো সাথে শেয়ার করতে হয়। বিশ্বাস কর! আমি কাউকে বলবনা।
: তুই বুঝবি না আরতি।
: না বুঝলেই তো তোমার জন্য ভাল। তুমি আমাকে বল। প্লিজ।
নিণন আরতির চোখে তাকল। তার চোখে আকুতি। যেন সে তাকে আস্বস্ত দেখতে চায়, মুক্তি দিতে চায়, আশ্রয় দিতে চায়। নিণন একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল, “ঠিক আছে, তোকে পরে বলব”। আরতির চোখ ছলছল করে উঠল, না এখন বল।
আরতি রান্না ঘরে চুপচাপ কাজ করছে। মিতা বেগম তাকে কিছু বললেন কিন্তু আরতি তা খেয়াল করনি দেখে আরতির কাছে এসে ওর কাধে হাত রাখতেই ও ছিটকে উঠল। মিতা বেগম বললেন, “আরতি কি হয়েছে! কি ভাবছিস এত? কেউ কিছু বলেছে? আরতি লজ্জা পেল, না মা কিছু হয়নি তো? আপনি কিছু বলছিলেন?
মিতা বেগম দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, আমি আর কি বলব। বলছিলাম, নিণনের সাথে তোর কথা হয়েছে? ও তোকে কিছু বলেছে? ওর সমস্যাটা কি?
: ভাইয়া কথা বলে নাকি? আপনাকে কিছু না বললে আমাকে বলবে?
: ওর কিছু একটা হয়েছে। মেয়ে টেয়ে নিয়ে কোন সমস্যা না তো?
আরতি হাসল।
: হাসছিস কেন? নিশ্চয় কোন খারাপ মেয়ের পাল্লায় পড়েছে।
: মা আপনি কি যে বলেন, আপনার ছেলেকে আপনি চেনেন না? নিণন ভাইয়া অন্যরকম। শেষ কথাটুকু বলতে গিয়ে আরতির গলার স্বর পরির্বতন হলেও সহজ সরল মিতা বেগম ধরতে পারলেন না।
৫.
এমনিতে রাস্তার অবস্থা বেহাল তার উপর বাসের বাজে সার্ভিস। কিছু যাত্রী বাসের স্টাফদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করলেও আরিফ টু শব্দটি করল না। বাসের স্টাফরাও সমান তালে যাত্রীদের সাথে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করতে থাকল। আরিফের মাঝে বাসের স্টাফ গুলার টুটি চেপে ধরতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু কাজটা শেষ করার আগে কোন ঝামেলা নয়। কাজটা ভাল মতে শেষ করে আসতে চায় ও। অনেক টাকার মামলা। অগ্রিম হিসাবে যা পেয়েছে তাই দুইটা কাজের সমান। কিন্তু একটা বিষয় ধরতে পারছেনা সে। মিতসু কাওয়া তার খবর পেল কিভাবে? এর মধ্যে সে একটা দোভাষীও জোগার করে ফেলেছে। যে ভাবেই করুক শালার ‘কাউয়া’র দরুন বুদ্ধি এইটা মানতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে কাওয়া যা করছে নিঁখুত ভাবেই করছে কোন ফাঁক ফোকর না রেখে। শেষটা তাকে করতে হবে। আরিফের কাজের একটা নীতি আছে। যে তাকে কাজ দেয় সে তার উদ্দেশ্য বিধেয় খুঁজতে যায় না আর নাদান বাচ্চাদের টার্গেট করে না। তাই কাজ নেয়ার আগে টার্গেটের বয়স সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়। তবে কাজ করার আগে টার্গেটকে ভাল ভাবে স্টাডি করার অভ্যাস আরিফের। প্রথমে বের হওয়ার রাস্তা ঠিক করে নিয়ে কাজ শুরু করে। তাই তিন দিনের জন্য প্লান নিয়ে শহরে এসেছে আরিফ। বাস থেকে নেমে মনে হল, যে ধকল গেছে তাতে তার বিশ্রাম খুবই দরকার।
খুব দামী হোটেল আর খুব সস্তা হোটেল গুলো মাড়ায় না আরিফ। দামী হোটেল গুলোতে হোটেল ম্যানেজম্যন্ট পারলে যেন পুলিশ। আর সস্তা হোটেলে পুলিশই হলো ম্যনেজম্যান্ট। এই শহরে অবশ্য দুইটাই হোটেল। হোটেল কম থাকলে কাজের জন্য সমস্যা। কিন্তু কিছু করার নেই। হাতের কাছে যেটা পেল সেটাতেই ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে একটা কামড়া নিয়ে জামা কাপড় না ছেড়ে বিছানায় পড়ে গেল আরিফ এবং কিছু ক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল। যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। উঠে বসল আরিফ। মাথা কেমন ভারি হয়ে আছে। ঝিমঝিম ভাব রয়ে গেছে। বিছানাতেই বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকল। গোছল করার জন্য উঠে পড়ল। রগরগিয়ে অনেকক্ষণ ধরে গোছল করল। গোছলের পর মাথাটা বেশ হালকা লাগছে। কাপড় চোপড় পড়ে বাইরে বের হল।
নিণনদের বাসাটা ভাল করে যাচাই করল আরিফ। মফস্বল শহর। বাসা বাড়ীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন বেশী নয়। রাতের বেলাতেই যতটুকু বুঝল তাতে মনে হচ্ছে কাজটা তেমন কঠিন হবে না। টার্গেটকে ফেলে দেয়া কোন ব্যপারই না। টার্গেট থেকে প্রতিরোধের কোন সম্ভাবনাই নেই। তবে এই কাজটার কঠিন দিক হল একটা ল্যাপটপ। যেভাবেই হোক ল্যপটপটা শালারপো ‘কাউয়া’র দরকার। শেষ পর্যন্ত ল্যপটপটা পাওয়ার জন্য হয়ত বাড়ীর সবাইকেই শেষ করে দিতে হতে পারে। যদিও মিতসু কাওয়া আর আরিফের আপতত টার্গেট অদ্ভুত নামে যুবক নিণন। আগামী কাল দিনের আলোতে ভালকরে দেখার জন্য আবার আসবে সে। আপাতত সময় কাটানোর জন্য নোংরা ইংরেজী ছবির পোস্টার দেয়া একটা সিনেমা হলে ঢুকে পড়ল। এক টিকেটে দুই ছবি দেখে যখন বের হল তখন রাত এগারটা বেজে গেছে। রাতের খাবার কিছু পাবে কিনা কে জানে? কিন্তু পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে আটার রুটি ভাজছিল দেখে সেখানেই ঢুকে গেল। গরুর মাংস দিয়ে গরম গরম আটার রুটি খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে ভাবল, একটু বেশী খাওয়া হয়ে গেল। ঢাকায় আজকাল এমন খাবার পাওয়া প্রায় দুষ্কর হয়ে গেছে। হোটেলে গিয়ে বিছানায় পড়তে না পড়তেই ঘুমিয়ে পড়ল আরিফ।
আগামী কালকের মধ্যে তার কাজটা শেষ করে ফেলতে হবে। হাতে নষ্ট করার মত সময় নেই। তারপরও নাস্তা করে খুব আস্তে ধিরে নিণনদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল আরিফ। বাড়ীটার চারপাশ দিয়ে যতটুকু স্বাভাবিক ভাবে হাটা যায় দেখে নিচ্ছে। সব কিছু হিসাব করে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা, প্রতিরোধ আসার সম্ভাবনা ইত্যাদি সব যাচাই করে নিল। ফিরে আসার সময় নিণনদের বাড়ীর ছাদে হঠাৎ চোখ আটকে গেল আরিফের। একটা যুবতি মেয়ে ছাদে কাপড় নেড়ে দিচ্ছে। মনে মনে বলে উঠল, “সালা কঠিন মাল”। ইচ্ছে করছিল আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে মেয়েটাকে দেখতে। কিন্তু তার উপায় নেই। তার কাজ শেষ, এখানে বেশীক্ষন থাকা সমীচিন নয়। আগামীকাল মঙ্গলবার। কার মঙ্গল হয় কে জানে!
৬.
তাকাসিনো কোম্পানীতে কাজের সুযোগটা পেয়ে যেন বর্তে গেল নিণন। সে যেন তার স্বপ্নের কাজ পেয়ে গেল। প্রজেক্ট ডিরেক্টর এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে তাকে এখানে নিয়োগ দেয়া হলো। বেতন হিসাবে যা পেত তা রীতিমত কল্পনার অতীত। কিন্তু টাকার জন্য কখনোই কাজ করেনি নিণন। দুই বছরের মাথায় তাকাসিনো কোম্পানীর উদ্দেশ্য যেন কিছুটা আচ করতে পারল নিণন। যে ন্যানো মাছি গুলো তারা তৈরি করেছে এ গুলো আসলে এক একটা কিলিং মেশিন। একত্রে তারা ইচ্ছা করলে যে কোন দেশের নিরাপত্তাকে নিমিষেই ভেঙ্গে দিতে পারে, কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলার আগেই। নিণনকে ধিরে ধিরে যেন আবরুদ্ধ করে ফেলা হচ্ছিল। তার সকল গতিবিধির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকল তাকাসিনো কোম্পানী। সে বুঝতে পারল মাছি গুলোকে বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে। দক্ষ কোন অপারেটর বা প্রোগামের হাতে এগুলো পরলে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাওয়া সম্ভব। নিণন সেই ধ্বংসের, বিদ্দেশের উপলক্ষ হতে পারেনা। ভিষণ মুষড়ে পরল ও। আগপিছ না ভেবেই ন্যনো গুলো নিয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিল।
বলতে গেলে কোন সমস্যা ছাড়াই বাংলাদেশে পৌছে গেল নিণন। ইমিগ্রেশনের সময় পুলিশ অফিসারটি হয়তো তাকে সন্দেহ করেছিল। যা হওয়ার হবে। মুটামুটি মানুষিক ভাবে প্রস্তুত ছিল সে। চেহারায় কোন অভিব্যক্তি যাতে না ফুটে ওঠে তার জন্য চেষ্টা করেছে। এর জন্যই হয়তো শেষমেষ পুলিশ অফিসারটি তাকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এত সহজেই তাকে ছেড়ে দেবেনা তাকাসি সান। যে ভাবেই হোক ন্যানো গুলো ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে সে।
রবোটিক্স ভাল বুঝলেও বাস্তব বুদ্ধি খুব বেশী নেই নিণনের। সে বুঝতে পারছে না আসলে কি করা দরকার। সারাদিন বলতে গেলে ছাদে তার চিলেকোঠায় কাটিয়ে দেয়। মাঝে মাঝেই ছাদে পায়চারি করে। বাসার কারো সাথে তেমন কথাই বলে না। বাসার সবাই তার এই আচরনে অসুন্তষ্ট সে বুঝতে পারছে কিন্তু কি করবে? ছাদে পায়চারি করে বিষয় গুলো ভাবার চেষ্টা করে ও।
ছাদে পায়চারি করার সময় হঠাৎ আরতি সামনে এসে দাড়াল। এতক্ষণ খেয়াল করিনি আরতিকে। অনেক মায়বতি চেহারা হয়েছে আরতির। সব কিছু খুলে বলার জন্য চেপে ধরল ও। আসলে কারো সাথে শেয়ার করার জন্য সে অস্থির হয়ে পড়েছিল। আরতির চোখের দিকে তাকিয়ে একধরনের আস্থা খুজে পেল যেন। খুটিয়ে খুটিয়ে প্রত্যেকটা জিনিষ বলল নিণন। সব শুনে আরতি স্তম্ভিত হয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ডুকরে কেঁদে উঠল। নিণন ধমক দিয়ে বলল, “এই জন্যই তো তোদের বলতে চাই না”।
আরতি দ্রুত চোখ মুছে বলল, “ঠিক আছে দেখ, আমি আর কাঁদছিনা”। এখন তুমি কি করবে ঠিক করেছো?
: আমি জানি না আমি কি করবো। কিন্তু সাবধান, মা বা বাবা যেন ঘুনাক্ষরেও কিছু টের না পায়।
: আমি বলবো না। কিন্তু তোমার মনে হয় বাবার সাথে বিষয়টা আলোচনা করা দরকার। বাবা হয়ত কোন একটা পথ বের করতে পারবে।
: না বাবা আরো অস্থির হয়ে যাবে। এর সাথে ওর সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে ফেলবে। আমাকে আরও ভাবতে দে। পরে না হয় সবাইকে বিষয়টা বলা যাবে।
আরতি সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল। নিণন বলল, “তুই যা। মা হয়তো তোকে খুজবে।” আরতি চলে যাওয়ার আরতি চলে যাওয়ার পর আর কিছুক্ষণ পায়চারি করল। কোন ভাবেই কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না ও। হঠাৎ মনে হল সে আসলে ভয় পাচ্ছে কেন? ভয়ংকর এক শক্তির মালিক সে। ইচ্ছে করলে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ তার কাছে নিয়ে নিতে পারে। কার ক্ষমতা আছে ওর বা ওর পরিবারের কারো কোন ক্ষতি করে?
নিণন তার ল্যাপটপটা নিয়ে বসল। তার বাড়ীর নিরাপত্তার জন্য দ্রুত কিছু প্রোগ্রাম দাড় করে ফেলল। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে এসে তার প্রোগ্রামটা রান করে দিল। সব গুলো ন্যানো জেগে উঠে বাতাসে এক পাক ঘুরে ঘরে একটা দল তার বাড়ীর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল আর অবশিষ্ট মাছি গুলো মেঝেতে এসে বসল। তারপর তারা একত্রিত হয়ে একটা হাউন্ডের রূপ ধারন করল। যেন একটা সিলভার হাউন্ড। হাউন্ডটা তার ঘরে হাটছে মনে হচ্ছে যেন সত্যিকারে রিস্টপুস্ট হাউন্ড শিকারের জন্য অপেক্ষা করছে। হাউন্ডটা তার ঘর থেকে বের হয়ে ছাদের এককোনে কম আলোতে গিয়ে বসে রইল। মাছি গুলো বাতাস থেকেই তার শক্তি সংগ্রহ করতে পারে বলে তাদেরকে কার্যকর করা হলে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলতে পারে। ওর প্রোগ্রাম অনুযায়ী ন্যনো গুলো যে কোন আকার ধরতে পারে এছাড়া বাড়ীর কারো চোখের আড়ালে থাকার মত করে প্রোগ্রাম করা হয়েছে ন্যানো গুলোকে।
আজ মঙ্গলবার। রাতের খাবার খেয়ে ছাদে চলে আসল নিণন। রাতের আকাশ কালো হয়ে আছে। হালকা বাতাস বইছে। ভেজা বাতাস। হয়ত কাছেই কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসে তার এলোমেলো চুল গুলো উড়ছে। খুবই ভাল লাগছে নিণনের। আরতি কখন এসে পাশে দাড়িয়েছে বুঝতে পরেনি। দুইজনই পাশাপাশি দাড়িয়ে রইল অনেক্ষণ। নিরবতা ভাঙ্গল আরতি, “ভাইয়া তোমার হাতটা একটু ধরি?” বলে ওর হাতটা ধরল আরতি। ওর নরম হাতে নিণনের হাতটা ডুবে গেল। আরতির দিকে তাকল নিণন। ওর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিণন আরেক হাতে ওর চোখ দুটি মুছে দিল। হঠাৎ ওর হাত ছেড়ে দৌড়ে চলে গেল আরতি। ওর চলে যাওয়া দেখল নিণন পিছু ডাকল না। আরতি চলে যাওয়ার পর আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইল নিণন। খুব শিগ্রয় হয়তো বৃষ্টি নামবে। ঝুম বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।
ঘুরে ঘরের দিকে রওনা হতেই দেখতে পেল আবছা আলোয় একজন লোক দাড়িয়ে আছে। ছায়ার মত অবয়ব দেখেই বুঝল, ও এক আততায়ী। হাতে একটা পিস্তল। স্থির দাড়িয়ে রাইল নিণন। আততায়ী খুব দ্রুতই পিস্তলটা উচিয়ে নিণনের বুক বরাবর তাক করল। আততায়ীটা কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল একটা সিলভার হাউন্ড। আততায়ীর কোন রকম প্রস্তুতি ছিলনা এরকম প্রতিরোধের জন্য। ন্যানো গুলো লোকটাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলল। মুর্হুতেই লোকটা যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল। ছাদে রয়ে গেল শুধু রক্তের একটা ধারা। এ সব ঘটে গেল খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে। চোখের সামনে একটা মানুষ ধ্বংস হয়ে গেল, কিছুই করার ছিলনা নিণনের। ন্যানো গুলো আবার হাউন্ডের আকার ধারণ করে সত্যিকারের কুকুরে মত লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে তার পায়ের কাছে এসে বসল। হঠাৎ শুরু হলো বৃষ্টি। আততায়ীর রক্তের ধারা ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির পানি। বৃষ্টির পর কোন চিহ্নই থাকবেনা একটা নৃশংস মৃত্যুর। বৃষ্টির মাঝেই নিণন আর তার কুকুরটা দাড়িয়ে রইল। নিণন ভাবল এখানেই শেষ নয়। এই ধ্বংসের খেলা চলবে কত দিন কে জানে?
নিণনের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে তা একাকার হয়ে গেল।